সোহরাওয়ার্দী উদ্যান | সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কোথায়

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান( Sohrawardi Udyan) বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত একটি বড় পার্ক। এটি বিভিন্ন বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদ প্রজাতির আবাসস্থল। এটি স্থানীয় এবং পর্যটকদের জন্য একইভাবে একটি জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে। এটি ঢাকার সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ পার্কগুলির মধ্যে একটি। যেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা বিশেষ অনুষ্ঠানে দর্শনার্থীদের বিপুল পরিমান ভিড় থাকে। লোকেরা পার্কের নির্মলতা এবং শান্তি উপভোগ করতে আসে, সেইসাথে এটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যতা উপভোগ করতে।তাই আজকে আমরা জানার চেষ্টা করব সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কোথায় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন নামকরণ করা হয় সেই সাথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত ইনশা আল্লাহ।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

রাজধানী ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত মনোরম ও শান্তিপূর্ণ একটি পার্ক হল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (Sohrawardi Udyan)। এটিকে শুধু পার্ক বলা যায় না, কেননা বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশ এবং বিক্ষোভের জন্য একটি জমায়েত স্থান হিসাবে বহুল পরিচিত। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই এটি বাংলাদেশের একটি মূল্যবান স্থান হয়ে উঠেছে। সবুজ ঘাস, প্রাণবন্ত ফুলের সারি সারি গাছ এবং ছায়া দেওয়ার জন্য প্রচুর গাছে ভরা পার্কটিতে সমস্ত বয়সের মানুষ বিশ্রাম নিতে পারে। পার্কের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি বড় পুকুর রয়েছে যা একটি শান্ত পরিবেশ এর অনুভূতি প্রদান করে থাকে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান | সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কোথায়

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সাধারণত রমনা পার্ক নামে বেশি পরিচিত। বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত একটি বৃহৎ সবুজ শহুরে উদ্যান। জাতীয় জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘর এবং ঢাকা শিশু পার্ক এর কাছাকাছি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, এটি স্থানীয় এবং পর্যটকদের জন্য একইভাবে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কোথায়

রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর এর শাহবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে রমনা পার্ক অভিমুখী ২ মিনিটের দুরত্তে অবস্থিত। এই ঐতিহাসিক উদ্যান টির উত্তরে ঢাকা শিশু পার্ক এবং দক্ষিনে বাংলা একাডেমী ও হাইকোর্ট ময়দান। একইদিকে পশ্চিমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্বে রমনা পার্ক এর অবস্থান।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কোথায় অবস্থিত

  • ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই উদ্যান টি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর এবং সু-পরিচালিত পার্কগুলির মধ্যে একটি। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শাহবাগ থানার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর টিএসসির একদম সাথেই অবস্থিত। সহজ কথায় এটি রমনা ১ নং গেট এবং ঢাকা শিশু পার্ক সংলগ্নে অবস্থিত।
বাংলাদেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি দীর্ঘ ও বিশেষ ইতিহাস রয়েছে। এটি ছিল ১৯৫২ সালের বিখ্যাত ভাষা আন্দোলনের স্থান, যা ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রথম সফল আন্দোলন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এর ইতিহাস

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু ঢাকার প্রাচীনতম পার্কই নয়, এটি দেশের অগ্রগতির প্রতীকও বটে। ১৯৬০ এর দশকের শেষদিকে প্রতিষ্ঠিত, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানটি বাংলাদেশকে আধুনিকীকরণ এবং পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার একটি বৃহত্তর প্রকল্পের অংশ ছিল।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে পার্কটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে যা ঢাকার সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নিতে চাওয়া যে কোনো ব্যক্তির জন্য একটি অত্যাবশ্যক ভ্রমন গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক এবং দেশের জাতীয় পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। পার্কটির একটি দীর্ঘ এবং অনন্য ইতিহাস রয়েছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি আশ্রয়স্থল হিসাবে পরিবেশন করা হয়েছিল। এটি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছিল এবং স্থানীয় এবং পর্যটকদের জন্য একইভাবে একটি জনপ্রিয় স্থান ছিল। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান নামে খ্যাত এই উদ্যান এ শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চ এর সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন। ত আর সেই দাকে হাজার হাজার বীর বাঙালি সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পার্কটি সমস্ত বয়সের দর্শকদের জন্য আরও অ্যাক্সেসযোগ্য এবং আনন্দদায়ক করার জন্য ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে৷ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঢাকার একটি প্রধান আকর্ষণ। তাছাড়া পার্কটি বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধএবং স্বাধীনতা জাদুঘর  এর আবাসস্থল। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখনও স্থানীয় এবং পর্যটক উভয়ের জন্য অবকাশ যাপনের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিভাবে যাবো

বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত এবং ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এ ঘুরতে আসা যায়। বেশ কিছু জনপ্রিয় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট (বাস) সার্ভিস এবং সিএনজি রয়েছে। এসবের মাধ্যমে সহজেই এই ঐতিহাসিক উদ্যান এ যাওয়া যাবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যাওয়ার উপায়
যাত্রা শুরুর স্থান বাস সমুহ
মিরপুর বিহঙ্গ, দিশারী, ট্রান্সসিল্ভা, শিকড়, হিমাচল, বাহন, নিউ ভিশন ইত্যাদি
গাবতলি/ সাভার গাবতলি ৮নং,বঙ্গবন্ধু ও এয়ারপোর্ট ট্রান্সপোর্ট সহ মিরপুর এর সকল বাস
গুলিস্তান/পল্টন শাহবাগ অভিমুখী সকল বাস যেমন, বিহঙ্গ, শিকড়, হিমাচল, দিশারী।
রামপুরা/বাড্ডা রমজান, তরঙ্গ প্লাস ইত্যাদি
মৌচাক/মালিবাগ রমজান, তরঙ্গ প্লাস
নারায়নগঞ্জ মেঘলা পরিবহন এবং হিমাচল
গাজীপুর/ এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট এ সরাসরি, বলাকা পরিবহনে কাকরাইল নেমে রিক্সা অথবা রমজান বাস
ধানমন্ডি মিডল্যান্ড, দিশারী, মেঘলা,ট্রান্সসিল্ভা, বাহন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন নামকরণ করা হয়

বাংলাদেশের ইতিহাসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। ১৯৭১ সালে এটি ছিল মুজিবনগর অপারেশনের স্থান, যা দেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সেই থেকে পার্কটি জাতীয় গর্বের প্রতীক, বাংলাদেশের জনগণের সাহসী ত্যাগ এবং স্বাধীনতার জন্য তাদের সংগ্রামের স্মারক হিসাবে আজও একটি স্মৃতিস্তম্ভ দাড়িয়ে আছে।

পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে বিশিষ্ট বাঙালি রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামে। যিনি ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছেন। তার নামের স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান কে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আখ্যায়িত করা হয়েছে।

তাছাড়া, পার্কটি ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয়-দফা আন্দোলন এবং পরবর্তী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ১৯৭৪ সালে, পার্কটির নামকরণ করা হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নামে, এবং তারপর এটিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামে একটি জাতীয় উদ্যান করে গড়ে তুলা হয়েছে যেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে স্বীকৃত।

এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর বিশালসবুজ ঘন এলাকা, বিভিন্ন ধরনের গাছ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। আজ এটি জাতির স্থিতিস্থাপকতা এবং সংকল্পের একটি প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য আনন্দ ও সান্ত্বনার উৎস হয়ে চলেছে।

প্রশ্নঃসোহরাওয়ার্দী উদ্যান জাদুঘর কোথায়?

উত্তরঃ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামে প্রতিষ্ঠিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্বাধীনতা জাদুঘর অবস্থিত। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।

প্রশ্নঃসোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রবেশ মূল্য বা টিকেট মূল্য কত ?

উত্তরঃসোহরাওয়ার্দী উদ্যান এ প্রবেশ করতে কোন প্রকার টিকিট ক্রয় করতে হয় না। তবে জাদুঘর এ প্রবেশ করতে হলে হন প্রতি ২০ টাকা করে চার্জ কাতা হয়।

Admin

আমি বিখ্যাত বিডি ওয়েবসাইটটির একমাত্র মালিক।আমি ঘুরতে পছন্দ করি এবং মাতৃভাষায় দেশের দর্শনীয় স্থান, বিভিন্ন জেলা এবং বাংলাদেশের সকল মার্কেট নিয়ে লিখালিখি করি। দেশ সম্পর্কে পড়ুন, জানুন, শিখুন, মতামত দিন। সর্বোপরি সাথেই থাকুন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post