পদ্ম ফুল আমাদের সকলেরই অনেক পছন্দের একটি ফুল। হাতে গুনা কয়েকটা ফুল হাত এর নাগালে পেলেই মন কেমন কেমন করে। বিশেষ করে শহরে তো এর চাহিদা জুড়ি মেলা ভাঁড়। আগেকার দিনে গ্রামের খাল বিল নদি নানা পুকুরে অনেক পরিমানে ফুটতে দেখা যেত এই ফুল। কালের বিবর্তনে এখন আর তেমন দেখা না গেলেও আজ আপনাদের এমন একটি জায়গা সম্পর্কে ধারনা দিব যে আপনাদের মনে ছটফটানি শুরু হয়ে যাবে। জি হ্যাঁ আমি গোপালগঞ্জ পদ্ম বিল এর কথাই বলছি।
পদ্ম বিল
বর্ষাকালে বিপুল পরিমানে ফুটতে দেখা যায় পদ্ম ফুল। বিশেষ করে বিলের ধারে ধাঁরে সারি সারি ফুল ডানা মেলে মাইলের পর মাইল জুড়ে বিস্তৃত থাকে গ্রামাঞ্চলে। এখন যদিও কিছুটা কম দেখা যায়, তবে গোপালগঞ্জ এর এই পদ্ম বিল অনন্য সৌন্দর্যের প্রতিক হিসাবে দাড়িয়ে আছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় জমায় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা অপরুপ এই পদ্ম বিল দেখতে।
কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর ভাষায় " বিশ্ব সংশয় এর তন্নতন্ন করে খুজে এনেছি ১০৮ টি নিল পদ্ম " নাহ। আমরা নিল পদ্মের খুজে আসিনি। আমরা এসেছি গোপালগঞ্জের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পদ্ম বিল এ। এখানে সাদা ও লাল এই দুই ধরনের পদ্ম ফুটে থাকে।
পদ্ম বিল কোথায়
- পদ্মবিল গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়ন এর বলাকইড় দক্ষিন পাড়া গ্রামের অপরুপ সৌন্দর্য মন্ডিত একটি বিল। প্রতিদিন সকাল ০৮ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্রমণ পিপাসুরা নান্দনিক সময় কাটান।
পদ্ম বিল কিভাবে যাব
- ঢাকার গাবতলি, সায়দাবাদ কিংবা গুলিস্থান থেকে গোপালগঞ্জ গামী যেকোনো বাসে করে গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইন মোরে নামতে হবে। এখান থেকে মোটর সাইকেল,সিএনজি, অটোরিকশা করে করপাড়া ইউনিয়ন এর বলাকপাড় গ্রামে নামতে হবে। এখান এ নামলেই পদ্ম বিল দেখা যাবে। বেশ কিছু বাস ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ এর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। টুঙ্গিপারা এক্সপ্রেস, মধুমতি(BRTC), গোল্ডেন লাইন সহ বেশ কিছু বাস।
- বরিশাল থেকে গৌরনদী-গোপালগঞ্জ হাইওয়ে ধরে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার পরে কাঠিবাজার স্টান্ড থেকে ১ কিলোমিটার উত্তরে, 'দক্ষিন বলাকইড়' লাল পদ্মবিলটি রয়েছে। কাঠি বাজার স্টান্ড থেকে ভ্যান বা অটোতে চরে স্পটে যেতে পারেন। নৌকা ভাড়া জন প্রতি ১০০ টাকা, তবে দর দাম করে কমেও নিতে পারবেন। বলে রাখা ভাল এখনকার নৌকা ভ্রমন এর সময় আনলিমিটেড।
পদ্মবিল গোপালগঞ্জ
গোপালগঞ্জ পদ্মবিল এই জেলার সকল দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি স্থান। প্রতিদিন সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শত শত ভ্রমন পিসাসু দের আনাগুনায় মুখরিত হয়ে উঠে বলাকইড় দক্ষিন পাড়া গ্রামটি। এখানে অতি স্বল্প খরচে ভ্রমন করা যায় বলে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এখানে বর্ষাকালে প্রচুর পরিমানে ফুল ফুটতে দেখা যায়। যদিও সকল সিজনেই কম বেশি ফুল দেকা যায়।
গোপালগঞ্জ এর এই দর্শনীয় স্থান ঘিরে বেশ কিছু স্টল ও হোস্টেল গড়ে উঠেছে। বার বি কিউ, সিসিয়ান চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, শম্পা হোটেল, ছোয়া রেষ্টুরেন্ট, ঐশী রেস্টুরেন্ট এখানকার জনপ্রিয় কিছু খাবারের হোটেল এর নাম। এখানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য অনেক নৌকা রয়েছে। ছোট, বড় ও ডিঙ্গি নৌকা থেকে শুরু করে বাহারি রঙের নৌকা রয়েছে। পিরু সরদারের বাড়ির কাছেই অবস্থিত সেতু থেকে নৌকা গুলো জাত্রা শুরু করে। বলে রাখা ভাল এখানকার নৌকা ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা হয়ে থাকে।
- এখানে অনেক পদ্ম ফুল ও অনেক জলজ উদ্ভিদ এর ফাকে ফাকে বিষাক্ত সাপ ও পোকা মাকড় থাকতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা একান্তই দরকার।
- যারা একান্তই সাতার জানেন না তারা প্রোটেকশন নিয়ে আসবেন। যদিও এখানে পানি বেশি না।
- নৌকায় উঠার আগে অবশ্যই ভাড়া ও সময় জিজ্ঞেস করে মিটমাট করে উঠবেন যেন পরবর্তীতে সমস্যা না হয়।
- প্রচণ্ড রোদ থেকে বাঁচতে শরবত ও ছাতা ইউজ করতে পারেন। কেননা ভিতরে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত এই বিল। মাঝি দের সাথে ভাল ব্যাবহার করবেন।
- একসাথে ৪-৫ জন ভ্রমণ করা নিরাপদ। বিলের মাঝপথে সন্ত্রাসী হামলা কিংবা অসৎ চক্র থেকে সাবধান থাকতে পারবেন। যদিও এখানে প্রচুর নৌকা ঘরাফেরা করে।
ফিরতে দেরি হলে এখানেই থাকতে পারবেন। কেননা এখানে বেশ কিছু গেস্ট হাউজ ও গোপালগঞ্জ সার্কিট হাউজ রয়েছে।আপনাদের সুবিধার্থে কয়েকটি হোটেল এর ঠিকানা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে এসব হটেলের মান কেম্ন তা জানা নেই, যাচাই করে নিবেন।
হোটেল জিমি( আবাসিক) | কালীবাড়ি, গোপালগঞ্জ। মোবাইলঃ 02-6685797 |
হোটেল রাজ পেলেস | গোপালগঞ্জ টাউন রোড।মোবাইলঃ 01725-367009 |
পলাস গেস্ট হাউজ | মুসলিম উদ্দিন প্লাজা, গোপালগঞ্জ। মোবাইলঃ 01711-126287, 01924-878008 |