জয়পুরহাট দর্শনীয় স্থান | জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত

জয়পুরহাট জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত এবং এটি তার প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত একটি জেলা।জেলাটি প্রধানত কৃষিপ্রধান, কারণ এর চারপাশে সবুজ গাছপালা এবং বেশ কয়েকটি নদী ও উপনদী রয়েছে। জয়পুরহাট জেলায় রয়েছে অসংখ্য জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং প্রাচীন সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। আজকে আমরা জানব জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত, জয়পুরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ এবং থানা কয়টি ও কি কি বিস্তারিত।

জয়পুরহাট জেলা

জয়পুরহাট জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা। জয়পুরহাট জেলার প্রধান শহর হলো জয়পুরহাট সদর। এই জেলাটির উত্তরে পাকিস্তানের প্রশাসিত কশ্মীর অঞ্চল রয়েছে। জয়পুরহাট জেলাটির মোট আয়তন ২,৭৮৬.৫০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১,৫৬,৩৫০। এই জেলাটির অর্থনৈতিক কেন্দ্র হলো জয়পুরহাট সদর।

জয়পুরহাট জেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা। এখানে বিখ্যাত জামে মসজিদ, পাহাড়ি মন্দির, ভবনবিহার সহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। জয়পুরহাট জেলাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দেখতে অনেক আকর্ষণীয়। এই জেলাটির অর্থনৈতিক প্রধান উৎস হলো কৃষি। মোট পাঁচটি উপজেলা নিয়ে এই জয়পুরহাট জেলা গঠিত। জেলাটির একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে এবং এখানে ছোট সোনা মসজিদ সহ অসংখ্য প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে, যা মুঘল যুগের।

জয়পুরহাট দর্শনীয় স্থান
জয়পুরহাট দর্শনীয় স্থান | জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত

জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত

জয়পুরহাট বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা যা বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত। এখানে কিছু বিখ্যাত উল্লেখযোগ্য কারণ দেওয়া হলো

  1. জামে মসজিদ: জয়পুরহাটের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আকর্ষণ হলো জামে মসজিদ। এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদের মধ্যে অন্যতম। এটি তারাঘাট উপজেলার করিমউদ্দিনপুর গ্রামে অবস্থিত। এই মসজিদটি সালেহ বউয়া রাজা এবং উন্নত শাসন দলের একজন সরকারি কর্মকর্তার নামে জানা হয়।
  2. পাহাড়ি মন্দির: জয়পুরহাটের অন্যতম আকর্ষণ হলো পাহাড়ি মন্দির। এটি জয়পুরহাট থেকে লিখনা বাজার এলাকার নিকট অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাথর মন্দির হিসাবে পরিচিত।
  3. ভবনবিহার: জয়পুরহাটে ভবনবিহার নামে একটি ঐতিহ্যবাহী মন্দির রয়েছে।

জয়পুরহাট জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ?

জয়পুরহাট জেলাকে সোনালী রাজধানী বলা হয় কারণ দেশের সবচেয়ে বেশি সোনালী মুরগি উৎপাদিত হয় এখানে। তাই জয়পুরহাট পোল্ট্রিশিল্প এর জন্য বিখ্যাত। জয়পুরহাট চটপটি এর জন্যও বিখ্যাত।এছাড়াও প্রধান অর্থকরি ফসলের মধ্যে লতিরাজ, কলা, ধান ইক্ষু অন্যতম।এ জেলার জামালগঞ্জে ১৯৭৩ সালে প্রায় ১১ একর জমির উপর নির্মিত হয় জেলার সরকারি হাঁস মুরগির খামার। সেই থেকে শুরু হয় পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন। এভাবেই জয়পুরহাট জেলা বিখ্যাত হয়ে উঠে সকলের কাছে।

কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এখনই জানুন

জয়পুরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান

  • লকমা রাজবাড়ীঃজয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম করিয়া গ্রামের ঐতিহাসিক লকমা রাজবাড়ি অবস্থিত।বাড়িটিতে বর্তমানে লকমা চৌধুরীঢ় নাতি সহ উত্তরাধিকারী ও স্থায়ী বাসিন্দার সমন্বয়ে ৪২ জন সদস্য কমিটি করে দেখাশোনা করে ২০০ থেকে ৩০০ বছর পূর্বে বাড়ি নির্মাণ হয় এবং বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫ বিঘা জমি রয়েছে উক্ত জমিতে বিভিন্ন শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান দেখা যায়।দালান দুটির একটি ঘোড়াশাল এবং অপরটি হাতিশাল ছিল।তার একটু সামনেই মাটির একটি ভিটি রয়েছে সেখানে বহুতল ভবনের অবস্থান।জনশ্রুতি আছে যে ভবনের কিছুটা অংশ মাটির নিচে ডেবে গেছে।লকমা চৌধুরী বাড়ির পূর্ব পাশে কর্মচারীর ঘর ও কবরস্থান রয়েছে।বর্তমানে রাজবাড়ীটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে এখনো প্রতিদিন অনেক মানুষ স্বচক্ষে দেখার জন্য আসেন।
  • নান্দাইল দিঘিঃঐতিহাসিক নান্দাইল দীঘি জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলায় অবস্থিত।দিঘিটি দীর্ঘে প্রায় এক কিলোমিটার।কথিত আছে রাজা নন্দলাল ১৬১০ সালে এই ঐতিহাসিক দীঘিটি খনন করেন।এই দিঘিটির আয়তন ৫৯.৪০ একর।স্থানীয় জনগণের মতে দিঘিটি এক রাতের মধ্যে খনন করা হয়েছিল।শিতকালে দিঘিটিতে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বর্তমানে এটি একটি পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে
  • আছরাঙ্গা দীঘিঃজয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন আটরাঙ্গা দীঘি এর আয়তন 25.50 একর।ধারণা করা হয় প্রায় 400 বছর পূর্বের 11 ফুট দৈর্ঘ্য এবং 1070 প্রস্থ বিশিষ্ট এই দীঘিটি খনন করা হয়।অনেকের মতে তাহিরপুর রাজপরিবারের সদস্য এ দিঘি খনন করেছিলেন।১৯৯২ সালে এই দিঘিটি পুনরায় খনন করা হয় যেখানে ১২ টি মূর্তি পাওয়া গেছে যা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।দিঘির চারদিকে অসংখ্য গাছপালা এবং এর স্বচ্ছ পানি এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে যা সহজেই আকৃষ্ট করে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে এখানে আসা ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের।
  • হিন্দা-কসবা শাহি জামে মসজিদঃহিন্দা-কসবা শাহি জামে মসজিদ বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলায় অবস্থিত ইসলামিক স্থাপত্য শিল্পের ছোঁয়ায় নির্মিত অন্যতম মসজিদ। জয়পুরহাট সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা গ্রামে এ মসজিদটি অবস্থিত। বাংলা ১৩৬৫ সালে বাগমারি পির পরিচিত চিশতিয়া তরিকার অন্যতম পীর আব্দুল গফুর চিশতী রাহমাতুল্লাহের নির্দেশে মাওলানা আব্দুল খালেক চিশতী আমলে তারই তত্ত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হয়।মসজিদটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এর অবকাঠামো। মোগল আমলের আকৃতিতে নির্মিত বেশিরভাগ মসজিদের বাইরের দেয়ালের পোড়ামাটির আস্তরণ দেখা যায় কিন্তু এই মসজিদের বাইরে আস্তরণে পরিলক্ষিত হয় কাচ ও চিনামাটির সমন্বয় বিভিন্ন নকশা।সূর্যের আলো পরতেই এই মসজিদটির ঝলমলে নজরকাড়া রুপ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের কথা চিন্তা করে এর ৫টি গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। মাঝের বড় একটি ও চারপাশের চারটি ছোট গম্বুজ রড ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের উত্তর পাশে ৪০ ফুট লম্বা মিনার রয়েছে।মিনারটির নিচে একটি ছোট কক্ষ আছে যেখান থেকে আজানের ব্যবস্থা করা আছে।মিনারের উপরে মাইক স্থাপন করা আছে যেখান থেকে আজানের ধ্বনি এলাকায় মুসল্লিদের নামাজে আহ্বান করা যায়।পূর্ব পাশে রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বখতির চারজন শীর্ষের মাজার।

এছাড়াও রয়েছেঃ

  • জয়পুরহাট চিনিকল
  • জামালগঞ্জ কয়লা খনি
  • পাথরঘাটা
  • ভীমের পান্টি
  • দুয়ারী ঘাট
  • বিলের ঘাট
  • শিব মন্দির
  • এবং পাগলা দেওয়ান বদ্দভুমি সহ অনেক কিছু।

জয়পুরহাট জেলার থানা কয়টি

জয়পুরহাট জেলা মোট ৫ টি উপজেলা ৫ টি পৌরসভা ও ৩২ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।এছাড়াও এখানে ৯৮৮টি গ্রাম ও ৭৬৬ টি মৌজা রয়েছে।আমরা জয়পুরহাট জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত আবং জয়পুরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানছি। আরও জেনেছি জয়পুরহাটের বিখ্যাত খাবার সম্পর্কে।এবার চলুন একনজরে জেনে নিই জয়পুরহাট জেলার থানা কয়টি এই সম্পর্কে।

জয়পুরহাট জেলার থানা সমূহ

  • জয়পুরহাট সদর
  • আক্কেলপুর
  • ক্ষেতলাল
  • কালাই এবং
  • পাচবিবি উপজেলা।

জয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

আমরা জানলাম জয়পুরহাট জেলার থানা কয়টি এবং জয়পুরহাট জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এই সম্পর্কে।নিচের টেবিল টি খেয়াল করলে আপনারা জেনে যাবেনজয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি সম্পর্কে।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কৃতি সন্তানের জন্ম এই জয়পুরহাট জেলায়।তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কণ্ঠশিল্পী দিলরুবা খানম,পাগলা পির দেওয়ান সমিরুদ্দিন,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খন্দকার অলিওজ্জামান আলম। এরারাওজয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি দের একটি তালিকা নিম্নে দেওয়া হলঃ

জয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

  • মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ
  • রামদেও বাজলা
  • অধ্যাপক মজিবুর রহমান দেবদাস
  • শামসুদ্দিন হিরা
  • আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরি

আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

১।প্রশ্নঃজয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত ?

উত্তরঃজয়পুরহাট জেলা মূলত পোল্ট্রিশিল্প এর জন্য বিখ্যাত।এজন্য জয়পুরহাট জেলাকে সোনালী রাজধানী বলা হয় কারণ দেশের সবচেয়ে বেশি সোনালী মুরগি এবং খামারি এই জেলায়।জয়পুরহাট জেলায় তৈরি চটপটি এর জন্যও বিখ্যাত।

২।প্রশ্নঃজয়পুরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান কি কি ?

উত্তরঃজয়পুরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে আপনি জেনে গেছেন ইতিমধ্যে।

৩।প্রশ্নঃজয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি দের নাম কি ?

উত্তরঃজয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি দের মধ্যে অন্যতম কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম বিস্তারিত পোস্টে।

৪।প্রশ্নঃজয়পুরহাট জেলার থানা কয়টি ?

উত্তরঃজয়পুরহাট জেলার থানা ৫ টি।

৫।প্রশ্নঃজয়পুরহাটের বিখ্যাত খাবার কি ?

উত্তরঃজয়পুরহাটের বিখ্যাত খাবার চটপটি ও লতা।

৬।প্রশ্নঃজয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের নাম ?

উত্তরঃ জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের নাম সালেহিন তানভির গাজি।

Admin

আমি বিখ্যাত বিডি ওয়েবসাইটটির একমাত্র মালিক।আমি ঘুরতে পছন্দ করি এবং মাতৃভাষায় দেশের দর্শনীয় স্থান, বিভিন্ন জেলা এবং বাংলাদেশের সকল মার্কেট নিয়ে লিখালিখি করি। দেশ সম্পর্কে পড়ুন, জানুন, শিখুন, মতামত দিন। সর্বোপরি সাথেই থাকুন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post