দিনাজপুর জেলার নামকরণের ইতিহাস
দিনাজপুর জেলার মোট আয়তন ৩৪৩৭.৫৮ বর্গ কিলোমিটার। দিনাজপুর রাজ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা, তার নাম অনুসারেই রাজবাড়ীতে অবস্থিত মৌজার নামকরণ করা হয় ঘোড়াঘাট।পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকগন এই নাম বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলা নামকরন করেন দিনাজপুর।
দিনাজপুর কিসের জন্য বিখ্যাত
দিনাজপুর জেলার বিখ্যাত খাবার,ব্যক্তি, মিষ্টি এর জন্যই বিখ্যাত বলে অভিভূত করা হতো। তবে সময়ের পালা বদলে এখানারকার চাষাবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সেই ধারাবাহিকতায় এখানে লিচু চাষ শুরু হয় শহরের বিভিন্ন জায়গায়। ক্রমে এই জেলা লিচুর জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠে।
- দিনাজপুর জেলা চিড়া, ও কাটারিভোগ চাল এর জন্য বিখ্যাত। এই জেলাটি লিচুর জন্যও বিখ্যাত। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত লিচুর বেশিরভাগই আসে এই দিনাজপুর থেকে। একসময় এখানে প্রচুর ইক্ষু চাষ হতো এবং কয়লার জন্য বিখ্যাত ছিল।
দিনাজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
দিনাজপুর জেলায় ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান সমূহ এর মধ্যে দীপশিখা স্কুল, দিনাজপুর রাজবাড়ী, কুমার মহল, আয়না মহল, আটচালা ঘর, ঠাকুরবাড়ি, রানী পুকুর, রানীমহল, নয়াবাদ মসজিদ, রামসাগর দিঘী,কান্তজির মন্দির অন্যতম।
দিনাজপুর রাজবাড়ী | দিনাজপুর রাজবাড়ী এই রাজবাড়ীটি দিনাজপুর জেলার খুব কাছেই অবস্থিত। এটি দিনাজপুর জেলার ইতিহাস ও ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছে । ১৯৫১ সালে জমিদারি বিলুপ্তির পর থেকে দিনাজপুর রাজবাড়ীর জোউলসে ফাটা পড়তে থাকে।১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সর্বশেষ জমিদার জগদীশ নাথ মৃত্যুবরণ করার পর দিনাজপুর এই রাজবাড়ীটি কালের সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে। |
রামসাগর দিঘী | রামসাগর দিঘী রামসাগর দিঘী মানুষের খনন করা বাংলাদেশের সব থেকে বড় দিঘী, যা দিনাজপুর জেলার তেজপুর গ্রামে অবস্থিত। রামসাগর দীঘির আয়তন ৪৭৩৪২ মিটার যার গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। দিঘির প শ্চিম পারে একটি ঘাট অবস্থিত । দিনাজপুরজেলা থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে রামসাগর দিঘী অবস্থিত। |
কান্তজির মন্দির | কান্তজির মন্দির বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা কান্তজির মন্দির। এ মন্দিরটি বিভিন্ন নামে পরিচিত কেউ বলে কান্তজি ও মন্দির কান্তনগর মন্দির আবার অনেকের কাছে কান্তজির মন্দির , নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত। ১৮ শতকে নির্মিত মন্দিরটি দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর তেতুলিয়া সড়কের ১ মাইল পশ্চিমে ক্ষ্যাপা নদীর তীরে কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত। |
নয়াবাদ মসজিদ | নয়াবাদ মসজিদ দিনাজপুরজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কাহারুল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামে ১.১৫ বিঘা জমির উপর এই মসজিদটি অবস্থিত।নয়াবাদ মসজিদের দেয়ালে ফলোকের তথ্য মতে ১৭৯৩ সালে সম্রাট তৃতীয় শাহ আলমের রাজত্বকালে মসজিদটি নির্মিত হয়। |
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি | বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি বাংলাদেশের একমাত্র বাস্তবায়িত কয়লা খনি।১৯৮৫ সালে আবিষ্কৃত এটি দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত। এর আয়তন ৬.৬৮ বর্গ কিলোমিটার। |
সপ্নপুরি | দিনাজপুর এর এই স্বপ্নপুরী নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাব গঞ্জ গ্রামে অবস্থিত প্রায় ৪০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নান্দনিক সৌন্দর্যের স্বপ্নপুরী এই স্বপ্নপুরীতে আছে অবিকল ভাস্কর্য কৃত্তিম পাহাড় যা চোখ জোড়ানোর মত অবস্থ। এখানে রয়েছে কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক, বৈচিত্র পূর্ণ গাছ গাছালি, পুঞ্জো, বাজার, নামাজের জায়গা, লেক, কৃত্রিম ঝরনা পশুপাখি, শালবাগান এবং ভুমিতে নির্মিত বাংলাদেশের মানচিত্র আরো অনেক। |
দীপশিখা স্কুল | দিনাজপুর জেলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বিরল উপজেলায় রুদ্রপুরে অবস্থিত এই ভিন্ন ধরনের স্কুলটি। এই স্কুলটি মাটির তৈরি একটি ভিন্নধরনের বিদ্যানিকেতন স্থানীয় মানুষের ঐতিহ্য ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। স্থানীয় কাঁচামাল বাস ও কাদামাটি দিয়ে নির্মিত এই দীপশিখা স্কুলটি মেটি স্কুল হিসেবে অধিক পরিচিত । |
দিনাজপুরের বিখ্যাত খাবার
- দিনাজপুর জেলার বিখ্যাত খাবার হল লিচু , চিড়া এবং পাঁপড়। এছাড়াও রয়েছে কাটারিভোগ চালের ভাত এবং বুট বিরিয়ানি।
দিনাজপুরের বিখ্যাত ব্যক্তি
- হাজী মোহাম্মদ দানেশ
- অধ্যাপক ইউসুফ আলী
- ব্রিটিশ ভারতের এমপি শামসুদ্দিন আহমেদ
- জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট এম আব্দুর রহমান
- সংসদ সদস্য সুভাষ দত্ত
- অষ্টম প্রধান বিচারপতি বেগম খালেদা জিয়া
- বিমান ঘোষ
- শিক্ষাবিদ এটিএম আফজাল
- ক্রিকেটার লিটন দাস
দিনাজপুর জেলার উপজেলা সমূহ
দিনাজপুর জেলার মোট আয়তন ৩৪৩৭.৫৮ বর্গ কিলোমিটার। বিরামপুর উপজেলা, বোঝাগঞ্জ উপজেলা, বীরগঞ্জ উপজেলা, ফুলবাড়ি উপজেলা, চিড়িরবন্দর উপজেলা, পার্বতীপুর উপজেলা, হাকিমপুর উপজেলা, ঘোড়াঘাট উপজেলা, কাহারুল উপজেলা, বিরল উপজেলা, খানসামা উপজেলা, দিনাজপুর সদর উপজেলা নবাবগঞ্জ উপজেলা, এই ১৩টি উপজেলা নিয়ে দিনাজপুর জেলা গঠিত।
দিনাজপুর জেলার উপজেলা সমূহ
- দিনাজপুর সদর
- বিরামপুর উপজেলা
- বোঝাগঞ্জ উপজেলা
- বীরগঞ্জ উপজেলা
- ফুলবাড়ি উপজেলা
- চিড়িরবন্দর উপজেলা
- পার্বতীপুর উপজেলা
- হাকিমপুর উপজেলা
- ঘোড়াঘাট উপজেলা
- কাহারুল উপজেলা
- বিরল উপজেলা
- খানসামা উপজেলা এবং
- নবাবগঞ্জ উপজেলা।
আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জেনে নিন
১।প্রশ্নঃ দিনাজপুরের পূর্ব নাম কী ?
উত্তরঃ দিনাজপুর জেলার পূর্ব নাম কি ছিল এই নিয়ে সুস্পষ্ট ধারনা না থাকলেও কেও কেও মনে করেন এ জেলার পূর্ব নাম দিনাজপুর ই ছিল। তবে "গণ্ড আয়ারল্যান্ড" কেও দিনাজপুরের পূর্ব নাম হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
২।প্রশ্নঃ দিনাজপুরের বিখ্যাত মিষ্টি কোনটি ?
উত্তরঃ দিনাজপুর জেলা তে অনেক মিষ্টি পাওয়া যায়। এ জেলা মেহেরপুর এর সাবিত্রি মিষ্টি, পাবনা সুইটস এর মিষ্টি এবং মহাজনি মিস্তির জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও গঙ্গারামপুর নয়াবাজার এর মিষ্টি এবং ঘোড়াঘাট এর রসগোল্লার জন্যও বিখ্যাত হয়ে উঠেছে এই দিনাজপুর।