লালমনিরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি থানা সমূহ

লালমনিরহাট জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অবস্থিত একটি সীমান্তবর্তী জেলা। ২৫.৪৮ ডিগ্রী থেকে ২৬.২৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮. ৩৮ ডিগ্রী থেকে ৮৯.৩৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে এ জেলার অবস্থান।এ জেলার উত্তরে ভারত পশ্চিম বঙ্গের  কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলা দক্ষিণের রংপুর জেলা  পূর্বে কুড়িগ্রাম ভারতের কোচবিহার পশ্চিমে রংপুর ও নীলফামারী জেলার অবস্থান  উত্তর ধরোলা নদী ও দক্ষিণে তিস্তা নদী প্রবাহিত। আজকে আমরা জানব  লালমনিরহাট জেলার ইতিহাস নামকরণ ও শিক্ষা, লালমনিরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিলালমনিরহাট জেলার থানা সমূহলালমনিরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ এবং লালমনিরহাট জেলা কোন খাবারের জন্য বিখ্যাত বিস্তারিত।

লালমনিরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
লালমনিরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি | লালমনিরহাট জেলার থানা সমুহ

লালমনিরহাট জেলা

প্রাচীন জনপদ মুসলিম দের তীর্থস্থান এই লালমনিরহাট জেলা। রাসুল পাক (সাঃ) এর মামা বিবি আমিনার চাচাতো ভাই আবু আক্কাস (আঃ) খ্রিস্টপূর্ব ৬২০- ৬২৬ বাংলাদেশে আসেন ইসলাম প্রচার করতে। সে সময় হুজুর পাক( সঃ) জিবিত থাকা অবস্থায় তার নির্দেশে লালমনিরহাটে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম মসজিদ হিসেবে খ্যাত।

এ জেলার আয়তন ৪৭৯.১৩ বর্গকিলোমিটার, এবং এ অঞ্চলে বসবাসরত মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৪০৬ জন।বাংলাদেশ সাক্ষরতার প্রেক্ষাপটে এ জেলার শিক্ষার হার ৭১%, অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭১ জন শিক্ষিত। যা অন্যান্য জেলার সাথে তুলনা করলে এ জেলার মানুষ তুলনামূলক ভাবে শিক্ষিত।

লালমনিরহাট জেলার থানা সমূহ

লালমনিরহাট জেলায় পাঁচটি উপজেলা রয়েছে এগুলো হলো লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালিগঞ্জ, হাতীবান্ধা এবং পাটগ্রাম উপজেলা।

লালমনিরহাট জেলার থানা সমূহ
  • লালমনিরহাট সদর উপজেলা
  • আদিতমারী উপজেলা
  • কালিগঞ্জ উপজেলা
  • হাতীবান্ধা উপজেলা এবং
  • পাটগ্রাম উপজেলা 

লালমনিরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

  • লালমনিরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি দের মধ্যে অন্যতম হলেন শেখ ফজলুল করিম, স্বনামধন্য কথা সাহিত্যিক আহসানুল্লাহ হক দুলু  তিনি সাবেক উপমন্ত্রী, এভারেস্ট জয়ী মুসা ইব্রাহীম অন্যতম। এছাড়াও রয়েছেন ফরহাদ হোসেন, জয়নুল আবেদিন সরকার ও কাজি শেখ রেয়াজ উদ্দিন।এই সকল মনিষীগণ যুগ যুগ ধরে লালমনিরহাট এর বিখ্যাত ব্যক্তি হিসাবে গণ্য হয়ে আছেন।

লালমনিরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
১।ফরহাদ হোসেন লালমনিরহাট জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি একাধারে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং সমাজ সেবক। বিখ্যাত এই মানুষটির জন্ম কালিগঞ্জে।
২।শেখ ফজলুল করিম তিনি একজন সাহিত্যিক এবং কবি
৩।আহসানুল্লাহ হক দুলু সাহিত্যিক এবং তিনি সাবেক উপমন্ত্রী।
৪।মুসা ইব্রাহীম তিনি বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী।
৫।সাথীরা জাকি তিনি সাবেক ক্রিকেটার।
৬।করিম উদ্দিন আহমেদ তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা।
৭।নুরুজ্জামান আহমেদ তিনি সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী।
৮।সালেহ উদ্দিন আহমেদ তিনি সাবেক সংসদ সদস্য।
৯।জয়নুল আবেদীন সরকার তিনিও সাবেক সংসদ সদস্য।
১০।কাজি শেখ রেয়াজ উদ্দিন শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিক।

লালমনিরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত

লালমনিরহাট জেলা তিনবিঘা করিডোর, দই খাওয়া, লাল পাথর, আদা ও শোলকার জন্য বিখ্যাত। শুধু তাই নয়, এ জেলার তৈরি তামাক, তিস্তা ব্রিজ এর জন্য সকলের কাছে লালমনিরহাট জেলা পরিচিত হয়ে উঠেছে।এছাড়াও এখানে রয়েছেঃ

  1. লালমনিরহাটে রয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়
  2. ৩৫টি কলেজ
  3. ৬৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  4. ৪৩ টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  5. ৭৮ টি মাদ্রাসা
  6. ৭৫৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়
  7. তিনটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং
  8. প্রায় ২০০ টি কিন্টারগার্টেন

লালমনিরহাট জেলায় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেঃ

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়
  • লালমনিরহাট সরকারি নার্সিং কলেজ 
  • হাতীবান্ধায় এস এস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
  • সরকারি আলিমুদ্দিন কলেজ
  • লালমনিরহাট সরকারি কলেজ
  • পাটগ্রাম সরকারি কলেজ
  • মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজ
  • আদিতমারী সরকারি আদর্শ কলেজ
  • বড় খাতা ডিগ্রী কলেজ
  • দই খাওয়া আদর্শ কলেজ হাতীবান্ধা
  • মৌলভী আবুল হাসেম আহমেদ সিনিয়র মাদ্রাসা এবং
  • হাতীবান্ধা মহিলা কলেজ

লালমনিরহাট জেলার ইতিহাস

এই জেলার নাম কেন লালমনিরহাট হয় তার অনেক কয়টি কারন রয়েছে। যেমন অনেকেই মনে করে যে, মাটির নিচে লাল পাথর পাওয়া গিয়েছিল এজন্য এর নাম লালমনি হয়েছে। অন্য আরেকটি কারণ হলো ১৭৮৩ সালে কৃষকদের অধিকার আদায়ের জন্য লালমনি নামের একজন মহিলা কৃষক নেতা  নুরুল দিন কে সাথে নিয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীদের ও জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের জীবন উপসর্গ করে।সেই থেকে এই জেলার নাম হয় লালমনি।

কালের বিবর্তনে হাট শব্দটি লালমনি শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে লালমনিরহাট হয়। লালমনিরহাট জেলার প্রকৃতি অপরূপ সুন্দর এখানকার গ্রামের মেঠো পথ, শহরের নিস্তব্ধ রাস্তাঘাট এক অনন্য প্রাকিতিক সৌন্দর্য বহন করে চলছে।

লালমনিরহাট কিভাবে যাবো

ঢাকা থেকে লালমনিরহাট এর দূরত্ব ৩৪৩ কিলো মিটার। ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, কল্যাণপুর, কলাবাগান, ফকিরাপুর, সায়দাবাদ, শ্যামলী এবং এয়ারপোর্ট ইত্যাদি বাস স্ট্যান্ড থেকে সহজেই যাওয়া যায়।লালমনিরহাট আসার জন্য দূরপাল্লার এসি এবং নন এসি বাস রয়েছে। এগুলো তে সময় লাগে  ৬ঃ৩০ ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টা। ঢাকা থেকে লালমনিহাট এর উদ্দেশ্যে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় গাড়ি ছেড়ে যায়।

  • রেল পথের ঢাকা থেকে লালমনিহাটের দ্রুত ৫৮০ কিলোমিটার। কমলাপুর রেলস্টেশন হতে লালমনিরহাট উদ্দেশ্যে শুক্রবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯.৪৫ মিনিতে লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ছেরে আসে।

লালমনিরহাট জেলার বিখ্যাত খাবার

এই জেলার  বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত খেজুরের রস, নাপা শাক এবং শোলকা। তাছাড়া এই অঞ্চলের মাটিতে আধা খুব ভালো জন্মায়। লালমনিরহাটের সবকটা উপজেলায় কম বেশি তামাকের চাষ হয়। ক্ষতি জেনেও দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষেরা তামাকের  চাষ করে আসছে।কারণ হলো বিনা সুদ ও  জামানতে তামাক কোম্পানির ঋণ সুবিধা। সহজেই বীজ  সার ও কীটনাশক পাওয়া এবং উৎপাদিত তামাক প্রক্রিয়াজাত কোম্পানির মাধ্যমে বিক্রি করা হয় এ জন্য মানুষ তামাক চাষ করেন।

লালমনিরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

লালমনিরহাট জেলায় বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তার মধ্যে হল ৬৯ হিজরির হারানো মসজিদ, তিস্তা ব্যারেজ, লালমনিরহাট বিমানবন্দর এবং লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন

এছাড়াও রয়েছেঃ

  • তিন হাট রেলওয়ে স্টেশন
  • তিন বিঘা করিডোর
  • তিস্তা রেল সেতু
  • তুষভান্ডার  জমিদারবাড়
  • কাকিনা জমিদারবাড়ি
  • সিন্ধুরমতি দিঘী
  • বোতল বাড়ি
  • নওদা বাস কালিগঞ্জ
  • কবি শেখ ফজলুল করিমের বসতভিটা
  • হাতীবান্ধা শালবন
  • ঐতিহ্যবাহী সিন্ধুর মন্দির এবং
  • বুড়িমারী জিরো পয়েন্ট।

Admin

আমি বিখ্যাত বিডি ওয়েবসাইটটির একমাত্র মালিক।আমি ঘুরতে পছন্দ করি এবং মাতৃভাষায় দেশের দর্শনীয় স্থান, বিভিন্ন জেলা এবং বাংলাদেশের সকল মার্কেট নিয়ে লিখালিখি করি। দেশ সম্পর্কে পড়ুন, জানুন, শিখুন, মতামত দিন। সর্বোপরি সাথেই থাকুন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post